নিউজ ডেস্কঃ নরসিংদীর ঘোড়াশালের এক পুলিশ কর্মকর্তার দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় স্থানীয় তিন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নরসিংদী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইও-১) জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার সকালে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
নরসিংদীর ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম বাদি হয়ে পলাশ থানায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেছিলেন।
মামলায় এজেহারে উল্লেখ করা হয়, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘ঘোড়াশালে চুরির অপবাদে যুবককে পিটিয়ে হত্যা পুলিশের’ এবং নরসিংদী প্রতিদিন নামের একটি অনলাইন পোর্টালে ‘ঘোড়াশাল ফাঁড়িতে নেওয়ার পর মৃত্যু, অভিযোগ পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যা বাদি ফেসবুকে ঢুকে দেখতে পান এবং দুটি প্রতিবেদনেই জহিরুল আলমের বরাত দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। কিন্তু, প্রকাশিত ওই দুই প্রতিবেদনের কেউ প্রতিবেদক মোবাইল বা সরাসরি বাদির সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি।
এ প্রসঙ্গে ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বরাত দিয়ে এমন বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য প্রকাশ করায় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। তাই নিজের সম্মান রক্ষার্থে ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল বুধবার বিকেলে ঘোড়াশালে পুলিশের হেফাজত থেকে ফিরে যাওয়ার পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মান্নান (৪০) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মারা যান।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, সাধারণ ছুটির সময় সিএনজি নিয়ে সড়কে বের হওয়ায় মান্নানকে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘোড়াশাল ফাঁড়ির পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে। এতে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় অটোরিকশা চালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
কিন্তু পুলিশের দাবি, মান্নানের হৃদরোগ ছিল। তাকে সড়কে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি ওই সিএনজি চালিয়ে পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের কালীগঞ্জের দক্ষিণ খলাপাড়া এলাকায় গিয়ে অসুস্থ হন। পরে সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পলাশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে ও উদ্ধারকৃত আলামতের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
এ প্রসঙ্গে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল পারভেজ মন্টি বলেন, ‘নরসিংদীতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এর আগে মামলা হলেও গ্রেপ্তারের ঘটনা এবারই প্রথম। জেলার অনেক সাংবাদিকই এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার করা হলো এই তিনজনকে, যা খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানাই।’
গ্রেপ্তারকৃত তিন সাংবাদিক হলেন- নরসিংদী থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক গ্রামীণ দর্পণের বার্তা সম্পাদক রমজান আলী প্রামাণিক (৪৫), একই পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত বণিক (৩৫) ও নরসিংদী প্রতিদিন নামের অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক খন্দকার শাহিন (৩২)।
সূত্র -ডেইলি স্টার